ঢাকা ০৭:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এজেন্সির প্রতারণায় হজযাত্রীদের কান্না

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৫৬:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ অগাস্ট ২০১৭
  • ২৪৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আজিজুল হাকিম মতিন। হাজীদের পথপ্রদর্শক মুয়াল্লিম হিসেবে কাজ করেন। তাকে ঘিরে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি। তাদের কেউ হজযাত্রী, আবার কেউ তাদের স্বজন। সবার চোখে-মুখেই হতাশার ছাপ। পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব গমনের জন্য অনেক আগেই তারা মতিনের কাছে টাকা জমা দিয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আশাভঙ্গের আশঙ্কায় হতাশ হয়ে পড়েছেন। মুয়াল্লিম মতিনকে ঘিরে ধরে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করছেন।
কিন্তু অসহায় মতিনেরও কিছুই করার নেই। তিনি এবার ৮৭ জন হজযাত্রী সংগ্রহ করেছেন। ঢাকার হজ এজেন্সির নিবিড় হজ ওমরাহ এন্ড টুরিজম এবং ক্লাব ট্রভেলসের মাধ্যমে তাদের নিবন্ধন করেছেন। এই দুই এজেন্সিকে প্রায় ২ কোটি টাকা পরিশোধও করেছেন তিনি। কিন্তু ধোঁকা দিয়েছে এজেন্সি। মাত্র ৩৩ জন হজযাত্রীকে সৌদি পাঠিয়ে গত সোমবার থেকে উধাও হয়েছে ওই এজেন্সির লোকজন। সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখেছে তারা। শুধু মতিন নয়, তার মতো আরো কয়েকজন মুয়াল্লিমকে একই পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে দেখা গেছে ঢাকার আশকোনা হজ ক্যাম্পে। সংশ্লিষ্ট এজেন্সির লোকজন তাদের টাকা আত্মসাৎ করে কেটে পড়েছে বলে তাদের অভিযোগ। তারা বলছেন, এজেন্সির কয়েকদফা অতিরিক্ত টাকা দাবির চাহিদা মিটিয়ে তাদের হাজীদের পাঠাতে পারছেন। এদিকে গত তিনদিন ধরে আশায় বুক বেঁধে হজ ক্যাম্পেই থেকে গেছেন এসব এজেন্সির অধীনে হজ পালনেচ্ছু হাজীরা। অন্যদিকে নিবন্ধন করার পরও গতকাল পর্যন্ত ৯৯৩ হজযাত্রীর ভিসার আবেদন করেনি বেশ কয়েকটি হজ এজেন্সি। ফলে তাদেরও হজ পালন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। গতকাল বিকালে আশকোনার হজ ক্যাম্পে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ রেজাউল করিমের সঙ্গে। নিবিড় হজ ওমরাহ ও টুরিজম এজেন্সির মাধ্যমে তিনিসহ তার শ্বশুর ৭০ বছর বয়সী মোহাম্মদ আলম ঢালী ও ৬৫ বছর বয়সী শাশুড়ি নাসিমা ঢালীর চলতি মৌসুমে হজ পালনের কথা। সেজন্য সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। গত তিন সপ্তাহ আগে জনপ্রতি ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা মুয়াল্লিমকে পরিশোধও করেছেন। কিন্তু শেষবেলায় আশাভঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা দিয়েছে। তিনি বলেন, গত তিনদিন ধরে এ ক্যাম্পে অপেক্ষা করছেন। আজ-কাল করে করে এই পর্যন্ত এসে ঠেকেছে। এজেন্সির মালিক ও তাদের লোকজন উধাও হয়ে গেছে। গত সোমবার বিকালের পর থেকে তাদের সঙ্গে কোনরকম যোগাযোগ করতে পারছেন না। তিনি জানান, প্রথম যেদিন তারা এই হজ ক্যাম্পে এসেছিলেন সেদিন এজেন্সির মালিক গোলাম কিবরিয়া তাদের বলেছিলেন, মুয়াল্লিমের কাছে তারা টাকা পাবেন। ওই টাকা পরিশোধ করে দিলেই তাদের যাওয়ার ব্যবস্থা করবেন। সোমবার এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলে গেছে। এরপর থেকে তাদের কোনো হদিস পাচ্ছেন না। তাদের সকল কাগজপত্র এবং পাসপোর্টও ওই এজেন্সির জিম্মায় রয়েছে। এখন তারা হতাশ হয়ে পড়ছেন। মুয়াল্লিম আজিজুল হাকিম মতিন বলেন, তিনি মোট ৮৭ জন হজ গমনেচ্ছুর নিবন্ধন করেন। তিনিটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তাদের প্রায় ২ কোটি টাকা দিয়েছেন। কিন্তু তারা এই ৮৭ জনের মধ্যে ৪৫ জনের ভিসা করেছে। এর মধ্যে ৩৩ জনকে সৌদি পাঠিয়েছে। বাকিদের এখনো ভিসা করেনি। এ ব্যাপারে হজ এজেন্সিদের সংগঠন হাব-কে জানানো হলে তারা গত তিনদিন আগে বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়। ওই এজেন্সির মালিক ভিসা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। তারপরও বাকি হজযাত্রীদের ভিসা হয়নি। গত সোমবার বিকালে এসে ভিসা দেয়া প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু হজ ক্যাম্প থেকে চলে যাওয়ার পর থেকেই তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। কোনোভাবেই যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, এখন আমি এই হজযাত্রীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছি। আবদুল মতিন এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হজ অফিসের পরিচালক বরাবর একটি অভিযোগও দিয়েছেন। আরেক মুয়াল্লিম আতাউর রহমান। তিনি ইকো এভিয়েশন নামে একটি হজ এজেন্সির মাধ্যমে ২৪ জন হজ গমনেচ্ছুর নিবন্ধন করিয়েছিলেন। সকল টাকা-পয়সা পরিশোধও করেছেন। এর মধ্যেই তিনজন হাজীকে রিপ্লেস করিয়ে অন্য তিনজনকে পাঠিয়েছে এজেন্সির মালিক রুহুল আমিন। অথচ তাদের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। তাকে ও ওই তিনজনকে না জানিয়েই তিনি রিপ্লেস করিয়ে অন্যদের পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, সব টাকা পরিশোধ করলেও অতিরিক্ত টাকা দাবি করছিলেন রুহুল আমিন। হজযাত্রী যাওয়া নিশ্চিত করতে তাই দু’দফায় অতিরিক্ত আরো ৩০ হাজার টাকা দিয়েছেন। কিন্তু সেই টাকাও আত্মসাৎ করে উধাও হয়ে গেছে। তিনি অভিযোগ করেন, গত বছরের কয়েকজন হাজীকে তিনি পাঠাননি। আজ পর্যন্ত সে টাকাও ফেরত দেননি। এ ব্যাপারে তিনিও অভিযোগ দিয়েছেন হজ অফিসে। এদিকে এসব অভিযোগের ব্যাপারে হজ অফিসের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা অভিযোগ পাওয়া মাত্রই ব্যবস্থা নিচ্ছি। এদেরকে ধরতে প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নেয়া হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

এজেন্সির প্রতারণায় হজযাত্রীদের কান্না

আপডেট টাইম : ০৪:৫৬:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ অগাস্ট ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আজিজুল হাকিম মতিন। হাজীদের পথপ্রদর্শক মুয়াল্লিম হিসেবে কাজ করেন। তাকে ঘিরে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি। তাদের কেউ হজযাত্রী, আবার কেউ তাদের স্বজন। সবার চোখে-মুখেই হতাশার ছাপ। পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব গমনের জন্য অনেক আগেই তারা মতিনের কাছে টাকা জমা দিয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আশাভঙ্গের আশঙ্কায় হতাশ হয়ে পড়েছেন। মুয়াল্লিম মতিনকে ঘিরে ধরে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করছেন।
কিন্তু অসহায় মতিনেরও কিছুই করার নেই। তিনি এবার ৮৭ জন হজযাত্রী সংগ্রহ করেছেন। ঢাকার হজ এজেন্সির নিবিড় হজ ওমরাহ এন্ড টুরিজম এবং ক্লাব ট্রভেলসের মাধ্যমে তাদের নিবন্ধন করেছেন। এই দুই এজেন্সিকে প্রায় ২ কোটি টাকা পরিশোধও করেছেন তিনি। কিন্তু ধোঁকা দিয়েছে এজেন্সি। মাত্র ৩৩ জন হজযাত্রীকে সৌদি পাঠিয়ে গত সোমবার থেকে উধাও হয়েছে ওই এজেন্সির লোকজন। সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখেছে তারা। শুধু মতিন নয়, তার মতো আরো কয়েকজন মুয়াল্লিমকে একই পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে দেখা গেছে ঢাকার আশকোনা হজ ক্যাম্পে। সংশ্লিষ্ট এজেন্সির লোকজন তাদের টাকা আত্মসাৎ করে কেটে পড়েছে বলে তাদের অভিযোগ। তারা বলছেন, এজেন্সির কয়েকদফা অতিরিক্ত টাকা দাবির চাহিদা মিটিয়ে তাদের হাজীদের পাঠাতে পারছেন। এদিকে গত তিনদিন ধরে আশায় বুক বেঁধে হজ ক্যাম্পেই থেকে গেছেন এসব এজেন্সির অধীনে হজ পালনেচ্ছু হাজীরা। অন্যদিকে নিবন্ধন করার পরও গতকাল পর্যন্ত ৯৯৩ হজযাত্রীর ভিসার আবেদন করেনি বেশ কয়েকটি হজ এজেন্সি। ফলে তাদেরও হজ পালন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। গতকাল বিকালে আশকোনার হজ ক্যাম্পে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ রেজাউল করিমের সঙ্গে। নিবিড় হজ ওমরাহ ও টুরিজম এজেন্সির মাধ্যমে তিনিসহ তার শ্বশুর ৭০ বছর বয়সী মোহাম্মদ আলম ঢালী ও ৬৫ বছর বয়সী শাশুড়ি নাসিমা ঢালীর চলতি মৌসুমে হজ পালনের কথা। সেজন্য সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। গত তিন সপ্তাহ আগে জনপ্রতি ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা মুয়াল্লিমকে পরিশোধও করেছেন। কিন্তু শেষবেলায় আশাভঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা দিয়েছে। তিনি বলেন, গত তিনদিন ধরে এ ক্যাম্পে অপেক্ষা করছেন। আজ-কাল করে করে এই পর্যন্ত এসে ঠেকেছে। এজেন্সির মালিক ও তাদের লোকজন উধাও হয়ে গেছে। গত সোমবার বিকালের পর থেকে তাদের সঙ্গে কোনরকম যোগাযোগ করতে পারছেন না। তিনি জানান, প্রথম যেদিন তারা এই হজ ক্যাম্পে এসেছিলেন সেদিন এজেন্সির মালিক গোলাম কিবরিয়া তাদের বলেছিলেন, মুয়াল্লিমের কাছে তারা টাকা পাবেন। ওই টাকা পরিশোধ করে দিলেই তাদের যাওয়ার ব্যবস্থা করবেন। সোমবার এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলে গেছে। এরপর থেকে তাদের কোনো হদিস পাচ্ছেন না। তাদের সকল কাগজপত্র এবং পাসপোর্টও ওই এজেন্সির জিম্মায় রয়েছে। এখন তারা হতাশ হয়ে পড়ছেন। মুয়াল্লিম আজিজুল হাকিম মতিন বলেন, তিনি মোট ৮৭ জন হজ গমনেচ্ছুর নিবন্ধন করেন। তিনিটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তাদের প্রায় ২ কোটি টাকা দিয়েছেন। কিন্তু তারা এই ৮৭ জনের মধ্যে ৪৫ জনের ভিসা করেছে। এর মধ্যে ৩৩ জনকে সৌদি পাঠিয়েছে। বাকিদের এখনো ভিসা করেনি। এ ব্যাপারে হজ এজেন্সিদের সংগঠন হাব-কে জানানো হলে তারা গত তিনদিন আগে বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়। ওই এজেন্সির মালিক ভিসা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। তারপরও বাকি হজযাত্রীদের ভিসা হয়নি। গত সোমবার বিকালে এসে ভিসা দেয়া প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু হজ ক্যাম্প থেকে চলে যাওয়ার পর থেকেই তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। কোনোভাবেই যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, এখন আমি এই হজযাত্রীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছি। আবদুল মতিন এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হজ অফিসের পরিচালক বরাবর একটি অভিযোগও দিয়েছেন। আরেক মুয়াল্লিম আতাউর রহমান। তিনি ইকো এভিয়েশন নামে একটি হজ এজেন্সির মাধ্যমে ২৪ জন হজ গমনেচ্ছুর নিবন্ধন করিয়েছিলেন। সকল টাকা-পয়সা পরিশোধও করেছেন। এর মধ্যেই তিনজন হাজীকে রিপ্লেস করিয়ে অন্য তিনজনকে পাঠিয়েছে এজেন্সির মালিক রুহুল আমিন। অথচ তাদের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। তাকে ও ওই তিনজনকে না জানিয়েই তিনি রিপ্লেস করিয়ে অন্যদের পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, সব টাকা পরিশোধ করলেও অতিরিক্ত টাকা দাবি করছিলেন রুহুল আমিন। হজযাত্রী যাওয়া নিশ্চিত করতে তাই দু’দফায় অতিরিক্ত আরো ৩০ হাজার টাকা দিয়েছেন। কিন্তু সেই টাকাও আত্মসাৎ করে উধাও হয়ে গেছে। তিনি অভিযোগ করেন, গত বছরের কয়েকজন হাজীকে তিনি পাঠাননি। আজ পর্যন্ত সে টাকাও ফেরত দেননি। এ ব্যাপারে তিনিও অভিযোগ দিয়েছেন হজ অফিসে। এদিকে এসব অভিযোগের ব্যাপারে হজ অফিসের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা অভিযোগ পাওয়া মাত্রই ব্যবস্থা নিচ্ছি। এদেরকে ধরতে প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নেয়া হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।